স্বাস্থ্যসাথী কার্ড হলো পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক নিম্ন-মাঝারি আয়সম্পন্ন মানুষকে প্রদত্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি বিশেষ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কম আয়সম্পন্ন জনসাধারণের জন্য বার্ষিক সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা পরিষেবার ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পগুলির সুবিধা পেতে বিশেষত লক্ষ্মীর ভান্ডারে নাম নথিভুক্ত করার সময় স্বাস্থ্যসাথীর নম্বর উল্লেখ করা অত্যাবশ্যক।
স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে কিভাবে নাম নথিভুক্ত করবেন, কারা আবেদন করতে পারবেন, আবেদনের জন্য কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন, কি কি সুবিধা পাওয়া যাবে বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি পড়তে অনুরোধ করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে কারা আবেদন যোগ্য?/ প্রয়োজনীয় শর্ত:-
• পরিবারের বয়:জৈষ্ঠ্যা মহিলার নামে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ইস্যু করা হয়।
• পরিবারে মহিলা না থাকলে পুরুষের নামে কার্ড হবে।
• কমপক্ষে ১৮ বছর বয়সী পুত্র ও ২১ বছর বয়সী অবিবাহিত মহিলার নাম কার্ডে নথিভুক্ত করা যাবে।
• সরকারি কর্মচারী যারা সরাসরি সরকারি Payroll এ বেতন পান না।
• যাদের কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের কোনো স্বাস্থ্যবিমায় নাম নথিভুক্ত নেই।
• এই প্রকল্পে আবেদনের জন্য আয়ের কোনো ঊর্ধ্বসীমা নেই। যেকোনো পেশার মানুষ এই প্রকল্পে আবেদন করতে পারেন।
• যার নামে কার্ড হবে তার বাপের বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ি উভয় পরিবারের লোকেরাই এই কার্ডের আওতায় আসবে।
• সমস্ত সরকারি হাসপাতাল ও সারা দেশে দেড় হাজারেরও বেশি বেসরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা মিলবে।
আরও পড়ুন: নার্সারির ব্যবসা করে মাসে ইনকাম করুন পঞ্চাশ হাজার টাকা। রাজ্য সরকার দিচ্ছে সুযোগ।
কিভাবে আবেদন করবেন?
প্রথমে অনলাইন থেকে স্বাস্থ্যসাথী ফর্ম B প্রিন্ট করে নিন। এবার ফর্মে উল্লিখিত Address, Cast, Beneficiary Name (উপভোক্তার নাম), পরিবারের বাকি সদস্যদের নাম, আধার নম্বর, খাদ্যসসাথী নম্বর ও মোবাইল নম্বর লিখে নীচে Beneficiary কে দিয়ে সাইন করিয়ে নেবেন। URN এর স্থানটি ফাঁকা রাখবেন। এরপর আবেদনকারী ও সদস্যদের আধার ও খাদ্যসাথী কার্ডের জেরক্স সহ এই ফর্মটব আপনার নিকটবর্তী ব্লক অফিসে অথবা দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে গিয়ে জমা করুন।
দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে আবেদন জমা করলে ৭-১৪ দিনের মধ্যে ফটো তোলার জন্য একটি নির্দিষ্ট তারিখ দেওয়া হবে। সেই তারিখে নির্দিষ্ট স্থানে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে উপস্থিত হতে হবে। ফটো তোলার সাথে সাথেই স্বাস্থ্যসাথী স্মার্ট কার্ড প্রদান করা হয়ে থাকে।
সুবিধা:-
কোনো জটিল/ব্যয়সাপেক্ষ অসুখ হলে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের সুবিধা দেয় এমন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে পরিবার পিছু বার্ষিক সর্বোচ্চ পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা পরিষেবার সুবিধা নিতে পারবেন। স্বাস্থ্যসাথী স্মার্ট কার্ডটি আজীবন বৈধ। প্রতিবছর স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্ডটি পুন:নবীকরণ হয়ে যায়। ভিনরাজ্যেও চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে।
কোন হাসপাতাল স্বাস্থ্যসাথীর অধীনে তা দেখবেন কিভাবে?
Google প্লেস্টোর থেকে Swasthya Sathi App টি ডাউনলোড করুন। এখন অ্যাপটি চালু করেActive Hospital অপশনে যান। আপনার ডিভাইসে একটি নতুন স্ক্রিন আসবে।তাতে রাজ্য (West Bengal), জেলা ও Hospital Type ও গ্রেড নির্বাচন করুন এবং খুঁজুন। এরপর আপনার সামনে স্বাস্থ্যসাথীর নিবন্ধনকৃত হাসপাতালের তালিকা উঠে আসবে।
এছাড়া হোমপৃষ্ঠায় Nearby Hospital এ ক্লিক করুন। এখন Distance দিয়েও স্বাস্থ্যসাথী হসপিটালের তালিকা দেখতে পাবেন।
স্বাস্থ্যসাথী সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ আপডেট:-
সম্প্রতি স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে দূর্নীতির অভিযোগ ওঠে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান গুলির বিরুদ্ধে। রোগী ও আত্মীয়দের অভিযোগ, চিকিৎসা সম্পূর্ণ না হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, কার্ডের সমস্ত টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। ফলত সমস্যায় পড়ছেন ভুক্তভোগী মধ্যবিত্ত পরিবাগুলি। তাই রাজ্য সরকার স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে নতুন নির্দেশ জারি করেছে, যেখানে বলা হয়েছে রোগীর চিকিৎসা সম্পূর্ণ না হলে অথবা অপারেশন বিফল হলে চিকিৎসা পরিষেবার পুরো টাকা দাবি করতে পারবে না হাসপাতালগুলি।
সেক্ষেত্রে হাফ টাকা পর্যন্ত চাওয়া যাবে। চিকিৎসা প্রক্রিয়া কোন ধাপ পর্যন্ত হলে কত টাকা দাবি করা যাবে তার তালিকা তৈরি করে দিয়ে রাজ্য সরকার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নবান্ন কর্তার বক্তব্য, স্বাস্থ্যসাথীর এই দুর্নীতির জন্য স্বাস্থ্যখাতে প্রচুর টাকা ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। তাই দুর্নীতি প্রতিরোধে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার।